আকাইদ ও নৈতিকতা (পাঠ ৮)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK
712

ইসলামের মূল বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নামই আকাইদ। যেমন: তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি। আর নৈতিকতা হলো নীতির অনুশীলন। অর্থাৎ কথা ও কাজে উত্তম রীতিনীতির অনুশীলন করা, মার্জিত ও বিনয়ী হওয়া, উত্তম চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি। অন্যায়, অশ্লীল ও অশালীন বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করাও নৈতিকতার অন্তর্ভুক্ত।
নৈতিকতা ও নীতির অনুসরণ মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। পশুর কোনোরূপ নীতিবোধ নেই। সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। ভালোমন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ কোনো কিছুরই সে পরোয়া করে না। সে শুধু নিজের লাভ ও কল্যাণই বোঝে। নীতিহীন মানুষও ঠিক তেমনি। সে কোনোরূপ আইনকানুন, বিধিবিধান মানে না। সে নৈতিক আচরণ পালন করে না। বরং নিজের লাভের জন্য সে অপরের ক্ষতিসাধন করে থাকে। মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা দেওয়া, পরচর্চা ইত্যাদি তার চরিত্রে ফুটে ওঠে। সমাজে সে নানারূপ অশান্তি সৃষ্টি করে। ফলে সমাজের কেউই তাকে বিশ্বাস করে না। কোনো মানুষই তাকে ভালোবাসে না।
অন্যদিকে নৈতিকতা মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ সমাজে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করে। সকলেই তাঁকে সম্মান করে।
আকাইদ ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আকাইদ বা ইসলামি বিশ্বাসসমূহ মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। যে ব্যক্তি আকাইদের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিশ্বাস করে তার চরিত্র সুন্দর হয়। সে সবসময় নীতি ও উত্তম আদর্শের অনুসরণ করে। অন্যায়, অত্যাচার, অশ্লীলতা থেকে সে সর্বদা দূরে থাকে। সে কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। বরং সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সে সচেষ্ট হয়।
আকাইদের প্রথম বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদ হলো একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা ও মালিক। তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী ইত্যাদি বিশ্বাস করা। তাওহিদে এরূপ বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনো অনৈতিক কাজ করতে পারে না। কেননা সে জানে যে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি তাকে সর্বদা দেখছেন এবং তার সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং সে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার হুকুমমতো জীবনযাপন করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে।

তাওহিদের পরই আসে রিসালাত। রিসালাত হলো নবি-রাসুলগণের উপর বিশ্বাস। তাঁরা আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। তাঁরা ছিলেন মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠজন। তাঁরা নিষ্পাপ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। সুতরাং রিসালাতে বিশ্বাসী মানুষ নবি-রাসুলগণের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাঁদের ন্যায় সেও উত্তম চরিত্র অনুশীলন করে। উদ্ধত ও অশালীন চলাফেরা ও কথাবার্তা তার থেকে কখনো প্রকাশ পায় না।

আখিরাতে বিশ্বাস আকাইদের অন্যতম অংশ। আখিরাত হলো পরকাল। মানুষের এ দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। বরং মৃত্যুর সাথে সাথে আরেক জীবনের শুরু হবে। এরই নাম আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এ জীবন অনন্ত ও চিরস্থায়ী। আখিরাতে মানুষের দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। দুনিয়াতে যে ভালো ও নেক কাজ করবে আখিরাতে সে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করবে। আর দুনিয়ায় যে অন্যায় ও পাপ কাজ করবে আখিরাতে সে চরম শাস্তির মুখোমুখি হবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়ার জীবনে ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। আখিরাতের সফলতা ও শান্তির আশায় মানুষ ভালো কাজ করে, সকলের সাথে মিলেমিশে চলে এবং উত্তম চরিত্রবান হয়। অন্যদিকে আখিরাতের শাস্তির ভয়ে মানুষ মন্দ ও অশ্লীল কাজ পরিত্যাগ করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। এভাবে মানুষ আখিরাতে বিশ্বাসের ফলে নৈতিকতা অনুশীলন করে থাকে।
অতএব, নৈতিকতা অর্জনে আকাইদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালোভাবে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করব। দুনিয়াতে নৈতিকতার অনুশীলন করব, অনৈতিক কাজকে কখনোই পছন্দ করব না। তাহলে আমরা ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করব।

কাজ ঃ শ্রেণির সব শিক্ষার্থী মিলে তাদের মধ্য থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করবে। তারা প্রত্যেকে এই পাঠ থেকে কী শিক্ষা পেলো তা আলোচনা করবে আর অন্য সব শিক্ষার্থী শুনবে। পরিশেষে সবাই মিলে একটি তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...